শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫
ঢাকা শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১
The Daily Post

সাবেক চিফ হুইপ লিটন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান 

মাদারীপুর প্রতিনিধি

সাবেক চিফ হুইপ লিটন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান 

মাদারীপুর-১ (শিবচর) সংসদীয় আসনের সাবেক এমপি ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধানের কাজ শুরু করেছে দুদক। পদ্মা সেতু প্রকল্পের নদী খননের বালু ফেলার জন্য অধিগ্রহণকৃত খাস জমি ভুয়া মালিক সাজিয়ে ৯শ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে মাঠে নেমেছে দুদক। ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে তাদের উপর এ তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়।

জানা গেছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে কাজ করার সময় নদী খননের বালু ফেলা হয় পদ্মা চরের দুটি স্থানে। এই চরের বাসিন্দারা বালু ফেলতে বাঁধা দিলে বাধ্য হয়ে এই চরের জমি অধিগ্রহণ করে সেতু কর্তৃপক্ষ। সেখানে ব্যয় হয় ৯শ কোটি টাকা। ৫ আগস্ট আ.সরকার পতনের পর থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠে ৯শ কোটি টাকার জমি অধিগ্রহণের কোন প্রয়োজন ছিল না। মাদারীপুর ১ (শিবচর) আসনের এমপি সাবেক চিফ হুইফ নূর-ই-চৌধুরী লিটন চাপ প্রয়োগ করে এ জমি অধিগ্রহণ করতে বাধ্য করায়। 

এছাড়া বেশিরভাগ জমিই খাস থাকলেও স্থানীয় বিভিন্ন ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে তাদের কিছু টাকা দিয়ে সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করেছে লিটন চৌধুরী ও তার অনুসারীরা। এছাড়াও অধিগ্রহণকৃত জমির একটি অংশ এরই মধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে  গেছে। অভিযোগ উঠা ৯শ কোটি টাকার অনিয়ম তদন্ত করতে গত ৭ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন ঢাকার উপ-পরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত-১) এর উপ-পরিচালক নারগিস সুলতানা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনের বিরুদ্ধে ৯শ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনার অনুসন্ধানের জন্য দুদকের উপ-পরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত-১) মো. খায়রুল হককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন। 

কমিটির আর দুই সদস্য হচ্ছে মাদারীপুর দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান ও উপ-সহকারী পরিচালক মো. সাইদুর রহমান অপু। এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। গত ২০ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের ই/আর তদন্ত-১/০০৩/২০২৫/প্রকা, ঢাকা স্মারকে উপ-পরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত-১) ও অনুসন্ধান কমিটির প্রধান মো. খায়রুল হক স্বাক্ষরিত একটি চিঠির মাধ্যমে মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের অধিগ্রহণকৃত চরের খাস জমির সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি ও রেকর্ডপত্র সরবরাহের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। 

এই বিষয়ে অনুসন্ধান কমিটির সদস্য ও মাদারীপুর দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সাবেক চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন ও অন্য সহযোগিদের বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু প্রকল্পের চরের খাস জমি ভুয়া মালিক সাজিয়ে ৯শ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে। যেখানে সদস্য হিসেবে আমি রয়েছি। 

আমরা মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি ও রেকর্ডপত্র সরবরাহের জন্য চাহিদা পত্র দিয়েছি। আগামী ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে আমাদের অনুসন্ধানের প্রতিবেদনের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে, আমরা সেভাবেই কাজ এগিয়ে নিচ্ছি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হঠাৎ করে আমাদের ফসলি জমিতে বালু ফেলা শুরু করে পদ্মা সেতুর লোকজন। আমরা বাঁধা দেই। তাতে কাজ না হলে এই চরের সব জমির মালিক একত্রে হয়ে আন্দোলন করি। আমাদের জমি অধিগ্রহণ না করে বালু ফেলতে দেব না বলে সিদ্ধান্ত নেই। তারপর সরকার আমাদের জমি অধিগ্রহণ করে নিয়েছে। আমরা আর কিছু জানি না। সরকারি খাস জমির বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, চরের কিছু জমি সরকারি খাস আছে জানি। তবে খাস জমির টাকা কেউ নিয়েছে কিনা তা আমরা জানি না। 

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোসা. ইয়াসমিন আক্তার বলেন, যেকোন অনিয়ম তদন্তের জন্য দুদক জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ অনুসন্ধানের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনকে তথ্যসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

টিএইচ